প্রকাশিত: ১৩/১০/২০১৯ ৯:০৯ এএম

এডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহান

এক।
বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়নের নাম ঘুমধুম। এটি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মায়ানমার সীমান্তবর্তী একটি প্রান্তিক ইউনিয়ন। এই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে ঘুমধুম, সোনাইছড়ি ও নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চলতি মাসের ১৪ তারিখে।
দুই।
এই অধম জন্মসূত্রে ঘুমধুম ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা ও ভোটার। গত জাতীয় নির্বাচন আর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে যাইনি আমি। না যাবার কারণটা বিভিন্ন পত্রিকায় আর নিউজ-পোর্টালে কলাম লিখে জানিয়েছি। তবে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে যাব কিনা ভাবছি। আর এ ভাবনারই অংশ এই নিবন্ধ।
তিন।
নিশিকালীন ভোটের যুগে ভোটের দিন বিকেলে ভিন্নমতের নাগরিকদের দোকানপাট ও যানবাহন চালানো বন্ধের হুকুম করা হয়েছে স্থানীয়ভাবে। এমনকি, ভোটের পরপর ভিন্ন দল ও মতের লোকজনের জমি-জমা দখল-বেদখলের আর তা নিয়ে মামলা-মোকাদ্দমা দায়েরের ঘটনাও ঘটেছে আমাদের এলাকায়।এসব অকাজে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁকে এ নিয়ে জিজ্ঞেস করবার সুযোগ হয়েছে অধমের। তিনি অধমের জিজ্ঞাসার উত্তরে চমৎকার উত্তর দিয়েছেন। বলেছেন, সারা দেশে যা হয়েছে ওই সময়, তা-ই হয়েছে আমাদের এলাকায়। যা-ই হোক, ওরকম অকপট সত্যকথনের জন্যে ঐকান্তিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতেই হয় তাঁকে।
চার।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের এবারকার নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন তিন জন প্রার্থী-বর্তমান চেয়ারম্যান ও ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ, উত্তর ঘুমধুম থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দীর্ঘদিনের সাবেক নির্বাচিত ইউপি সদস্য রশিদ আহমদ ও তুমব্রু থেকে অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক তুমব্রু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুর রহিম চেয়ারম্যানের পুত্র মৌলানা সালেহ আহমদ। এদের মধ্যে স্নাতক ডিগ্রীধারী জাহাঙ্গীর আজিজ চেয়ারম্যান হিসেবে গত পাঁচ বছরে এলাকাবাসীর সেবা করবার সুযোগ পেয়েছেন আর সে সুযোগ তিনি কতোটা কাজে লাগাতে সমর্থ হয়েছেন, তা তিনি নিজে আর এলাকাবাসীই ভালো বলতে পারবেন। রশিদ আহমদ গত নির্বাচনে রানার্স-আপ ছিলেন; স্বল্পভাষী ভদ্রলোক হিসেবে সুনাম রয়েছে তাঁর। মৌলানা সালেহ আহমদ এই প্রথম বার প্রার্থী হয়েছেন; বছর কয়েক ধরে তাঁর পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের মাধ্যমে পুরো ইউনিয়নে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়ন সাধন করেছেন নিজের কস্টার্জিত অর্থে। তবে ভোটাররা বলছেন, গত বারের ন্যায় এবারও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জাহাঙ্গীর আজিজ ও রশিদ আহমদের মধ্যে।
পাঁচ।
এই নির্বাচনে একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।তিনি নাকি বলছেন, লোকে ভোট দিলেও তিনি চেয়ারম্যান, না দিলেও চেয়ারম্যান; তাঁকে যাঁরা ভোট দেবেন না, ১৪ তারিখের পরে তিনি তাঁদের দেখে নেবেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা নাকি আরও এক কাঠি সরেস-তাঁরা কারও কারও ঘর-বাড়ি ঘেরাও করে পুড়িয়ে দেবেন বলে প্রকাশ্যেই হুমকি দিচ্ছেন।এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের সমীপে অভিযোগ দায়েরের মত ঘটনাও ঘটেছে। কর্তৃপক্ষের উচিত, এসব অভিযোগ সত্য হলে সেগুলো আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া; সর্বোপরি, অবাধ ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা।
ছয়।
নির্বাচনে প্রার্থী হলে নিজের ইতিবাচক ভাবমূর্তি আর ইতোপূর্বেকার অবদান উপস্থাপন, ভদ্রতা-নম্রতা প্রদর্শন আর ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ভোটারের মন জয় করে নিজের পক্ষে টানাই বিধেয় বলে জানি। কেউ যদি এর অন্যথা করেন, তো তাতে ভোটারদের সাথে গাদ্দারিই করা হয়।
সাত।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হোক। চেয়ারম্যান পদে যিনিই নির্বাচিত হোন না কেনো, তাঁকে আগাম স্বাগতম জানিয়ে রাখছি।

মোহাম্মদ শাহজাহানঃ
এডভোকেট,
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।
মুঠোফোনঃ ০১৮২৭৬৫৬৮১৬।

পাঠকের মতামত

আসলে কি বয়কট করছি!

আমরা বাঙালি নতুন ইস্যু পেলে দৌড়ে তা দেখার জন্য উৎকণ্ঠা প্রকাশ করি। আজ বয়কট নিয়ে ...